স্বদেশ ডেস্ক:
স্ট্রোক হলো মস্তিষ্কের একটি রোগ, যাতে রক্তনালিতে জটিলতা দেখা দেয় এবং হঠাৎ করেই মস্তিষ্কের একাংশ কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। মনে রাখতে হবে, স্ট্রোক হার্টের কোনো রোগ নয়। এ রোগের লক্ষণ হলো- হঠাৎ করেই শরীরের একাংশ অবশ বা দুর্বল হয়ে যাওয়া, মাথাব্যথা ও বমি হওয়া, হঠাৎ অজ্ঞান হওয়া, কথা জড়িয়ে যাওয়া বা একেবারেই কথা বলতে না পারা ইত্যাদি।
তাৎক্ষণিক করণীয় : কোনো রোগীর উল্লিখিত লক্ষগুলো দেখা দিলে বুঝতে হবে, তার স্ট্রোক হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আতঙ্কিত না হয়ে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রয়োজনে নিকটস্থ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিতে হবে। সম্ভব হলে মস্তিষ্কের CT Scan করে স্ট্রোকের ধরন বুঝতে হবে। মনে রাখতে হবে, স্ট্রোক দুধরনের হয়। মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল ব্যাহত হওয়ার জন্য (Ischemic Stroke) অথবা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের জন্য (Hemorrhagic Stroke)। রোগ অনুযায়ী উভয়ের চিকিৎসা পদ্ধতিও ভিন্ন ভিন্ন।
জরুরি চিকিৎসা : অজ্ঞান রোগীর ক্ষেত্রে-শ্বাসনালি, শ্বাসপ্রশ্বাস ও রক্তসঞ্চালন নিয়মিত রাখা। রোগীকে একদিকে কাত করে, বালিশ ছাড়া মাথা নিচু করে শোয়াতে হবে। চোখের যত্ন নিতে হবে। মূত্রথলির যত্ন (প্রয়োজনে ক্যথেটার ব্যবহার) দিতে হবে। খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। স্ট্রোকের সব রোগীকে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয় না। তবে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, খিঁচুনি, রোগী অজ্ঞান হলে অথবা স্ট্রোকের সঙ্গে অন্যান্য রোগ, যেমন- উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি থাকলে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন। চিকিৎসার প্রধান উদ্দেশ্য, মৃত্যুর ঝুঁকি কমানো, কর্মক্ষমতা ফিরিয়ে আনা এবং পরবর্তীকালে যেন স্ট্রোক না হয়, তার ব্যবস্থা করা (Secondary stroke prevension)।
প্যারালাইসিস হলে করণীয় : বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা নিতে হবে এবং ফিজিওথেরাপি করাতে হবে।
ঝুঁকি : আমাদের দেশে স্ট্রোকের হার প্রতিহাজারে ৫ থেকে ১২ জন হয়। প্রায় ৫ শতাংশ মানুষ স্ট্রোক রোগের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
প্রতিরোধের উপায় : স্ট্রোক অনেকাংশেই প্রতিরোধযোগ্য। প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন সচেতনতা। যেমন- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, ধূমপান পরিহার করা, রক্তের চর্বি নিয়ন্ত্রণ, শারীরিক ব্যায়াম নিয়মিত করা, ওজন ঠিক রাখা, প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ শাকসবজি, সতেজ ফলমূল খাওয়া ইত্যাদি।
সম্পূর্ণ সুস্থতার হার : যথাসময়ে চিকিৎসা করলে ৩০ শতাংশ রোগী সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে ওঠে এবং ৩০ শতাংশ পক্ষঘাতগ্রস্ত থাকে।
লেখক : অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস